অনুভূতির ঘাটতি, প্রযুক্তির আধিপত্য

বিশ্ব বাংলা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৩৯:৫০,অপরাহ্ন ০৪ জুন ২০২৫৮০’র দশকে যারা জন্ম নিয়েছি তারা রেডিও থেকে স্পটিফাই, ভিসিয়ার থেকে নেটফিক্স, ডায়ালআপ থেকে ৫জি, ল্যান্ডলাইন থেকে স্মার্টফোন, আর হাতে লেখা চিঠি থেকে ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজ প্রযুক্তির প্রতিটি পরিবর্তন কাছে থেকে দেখেছি। খুব আশ্চর্য হই নি, কারণ এ পরিবর্তনগুলো ধীরে ধীরে আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে।
সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে, আরো হবে। কিন্তু বর্তমানে কিছু বিষয় বা লিখালিখির পরিবর্তন দেখে বেশ আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করছি, চারপাশে লেখার ধরণ পাল্টে যাচ্ছে। শব্দগুলো নিপুণ, বাক্য গুলো সাজানো কিন্তু তাতে যেন প্রাণ নেই। কল্পনা নেই, ব্যথা নেই, আনন্দের সেই হালকা কম্পনটাও অনুপস্থিত। যেন কেউ একেবারে নিখুঁত ভাবে রান্না করেছে, দেখতে বেশ ভাল লেগেছে কিন্তু মুখে দিয়ে লবনের স্বাদ কম মনে হয়েছে।
আমি নিজে একটু সেকেলে স্বভাবের, রুটিনের মধ্যে বেশি স্বাচ্ছদবোধ করি। সামান্য কিছুদিন আগে বন্ধুদের গ্রুপ ম্যাসেঞ্জারে চার লাইনের একটি কবিতা লিখে পাঠাতেই ফিরতি প্রায় একই সাথে চার/পাচটা কবিতা দ্রুত পস্রব হওয়াতে কিছুটা আদন্দিত হয়েছিলাম, আমার বন্ধুরা তো চাইলে অনেক ভাল কবিতা লিখতে পারে। যাক, পরবর্তিতে এক বন্ধু আমার ঘুর কাটিয়ে বললো এটা এআই কারিসমা।
যেহেতু কমিউনিটি, অ্যাডভোকেসি জার্নালিজমের সাথে জড়িত সেক্ষেত্রে সাংবাদিকতা নিয়ে মোটামোটি ঘাটাই এবং প্রায়ই একই দৃশ্য চোখে পড়ে। আগে একজন রিপোর্টার মাঠে অথবা অনুষ্ঠানস্থলে যেতেন, মানুষের কথা শুনতেন পরবর্তীতে সেই শব্দগুলোকে লেখায় ফুটিয়ে তুলতেন। এখন অনেক সময় দেখা যায়, একটা সংবাদ বানাতে মানুষ আর মানুষের কাছে না গিয়ে গুগল আর এআইয়ের থেকে সহযোগিতা নেয়। এক্ষেত্রে তথ্য ঠিকই আসে কিন্তু সেই তথ্যের পেছনের মানুষটা হারিয়ে যায়। লিখা মানে শুধু তথ্য নয় লিখা মানে অনুভব, উপলব্ধি, আর কখনো কখনো একটা দীর্ঘ নীরবতা।
সৃজনশীল কাজে প্রযুক্তির অন্ধ নির্ভরতার পরিবর্তে, সচেতনভাবে ব্যবহার করাই জরুরি। তবে সেই ব্যবহারে যেন মানুষটাই মুখ্য থাকে, মেশিন নয়।
একটা সময় মানুষ লেখা পড়ে মন্তব্য করে বলতো, লিখাটি অনেক ভাল হয়েছে বা আরেকটু গুছিয়ে লিখলে ভাল হত। এখন অনেকে বর্তমান লিখা পড়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলে, এটা কি এআই দিয়ে করেছন? এই প্রশ্নটা শুধু সন্দেহ নয়, একটা দীর্ঘশ্বাসও বটে।
আফাজ জনি
২৯শে মে ‘২৫ইং, বার্সেলোনা।
