ঘুমে ছিলেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা, ‘আলামতে’ চেতনা ফিরেছে
বিশ্ব বাংলা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২৮:১৭,অপরাহ্ন ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ওয়েছ খছরু:
ঘুমে ছিলেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। ‘আলামতে’ চেতনা ফিরেছে। কেন্দ্রের আগে হতে পারে সিলেটের সম্মেলন ও কাউন্সিল। ইতিমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সভা থেকেও এমন আভাস পাওয়া গেছে। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, সম্মেলন ও কাউন্সিলের জন্য তারা প্রস্তুত। কেন্দ্রের নির্দেশ পাওয়া গেলে তারা কার্যক্রম শুরু করবেন। এদিকে, করণীয় নির্ধারণ করতে গতকাল সন্ধ্যায় কেন্দ্র গঠিত সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক কমিটির নেতারা ঢাকায় বৈঠক করেছেন। সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি পাঁচবছর আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এরপরও এ দুটি কমিটি দিয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে- দুটি জাতীয়, দুটি সিটি করপোরেশন, দুটি উপজেলা, একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে ঘটেছে নানা ঘটনা। মনোনয়ন কেন্দ্র করে তৃণমূল থেকে জেলা ও মহানগর পর্যন্ত বিভক্তি দানা বেঁধেছে। গেল উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব আওয়ামী লীগ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের দিকে চোখ রাঙাচ্ছে কেন্দ্র। যেকোনো মুহূর্তে আসতে পারে শাস্তির খড়গ। এই অবস্থায়ও সিলেটের নেতারা সম্মেলন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।
সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১১ সালের ২১শে নভেম্বর। সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা আব্দুজ জহির সুফিয়ানকে সভাপতি ও শফিকুর রহমান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট জেলা এবং বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে সভাপতি ও আসাদ উদ্দিন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করে দেন। চার সদস্যের দুটি কমিটি গঠনের প্রায় এক বছরের মাথায় ঘোষণা করা হয়েছিল ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি। জেলা ও মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর বিদ্রোহ আরো চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। সিলেটে ঝাড়ু মিছিলসহ নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটে। শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়। ২০১৪ সালের ২১শে নভেম্বর শেষ হয়ে গেছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। কিন্তু সম্মেলন না হওয়ার কারণে পুুরনো কমিটি দিয়েই চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান। তার মৃত্যুর পর অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভপতি করা হয়। কিন্তু বয়োবৃদ্ধ নেতা হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তিনি নীরব থাকেন। ফলে এক নেতা অর্থাৎ শফিকুর রহমান চৌধুরী নির্ভরতা দিয়েই চলছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। এদিকে কমিটি গঠনের পর থেকে ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে তেমন সুবিধা করতে পারেনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বসহ নানা ঘটনায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হন। কিন্তু সর্বশেষ উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছেছে। দলের অভ্যন্তরে বিভেদ রেখেই তারা নৌকার জয়ে সফলতা দেখিয়েছেন।
এর মধ্যে তারা সম্মেলন করে ৬টি উপজেলা কমিটি গঠন করেছিলেন। নতুন গঠন করা কমিটিগুলোর মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আর পুরাতনগুলোর মেয়াদ এক যুগের বেশি। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, নতুন করে সম্মেলন ও কাউন্সিল প্রয়োজন। কেন্দ্রের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটি তারা পালন করবেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছুটা বিভেদ আছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা ছিলেন তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। এতে দল আরো সুশৃঙ্খল হবে বলে জানান তিনি। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি দুটি সিটি নির্বাচনের সাক্ষী হয়ে রইলো। এ কমিটির অধীনেই ২০১৩ ও ২০১৯ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। এ দুটি নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পরাজয় বরণ করেন। এরপর থেকে দুটি নির্বাচনকে ঘিরে দলের ভেতরে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। মহানগরের কয়েকজন নেতাও কেন্দ্রের শোকজের মুখোমুখি হয়েছিলেন। অভিযোগ উঠে, দলের কয়েকজন নেতা দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় ঘরে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। বরং তাদের বিতর্কিত ভূমিকার কারণেই সিলেটে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় ত্বরান্বিত হয়।
এ কারণে দলের তৃণমূল নেতাদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সিনিয়র নেতারা। তবে, মহানগর আওয়ামী লীগের ভেতরে ঐক্য অনেকটা অটুট রাখেন বর্তমান সভাপতি ও কেন্দ্র্রীয় কমিটির সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি দুটি নির্বাচনে পরাজয় ভুলে সিলেটে দলকে সুসংগঠিত করার কাজে মনোনিবেশ করেন। দুটি নির্বাচনে নিজে ব্যর্থ হলেও সিলেট বিভাগের স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে তিনি নৌকার বিজয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। মহানগর নেতারা জানিয়েছেন, জেলার মতো একই সময়ে মহানগরের কমিটি গঠন করা হয়। মহানগরে রয়েছে ২৭টি ওয়ার্ড। এর মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডে তারা সম্মেলন নতুন কমিটি করেছেন। আর ৫টি সম্মেলন করা হয়নি। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার জানিয়েছেন, মহানগর আওয়ামী লীগ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। যে নির্দেশনা আসবে সেটি তারা পালন করবেন। এদিকে, দলের শীর্ষ নেতাদের ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরাও তোড়জোড় শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান জানিয়েছেন, গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক কমিটির বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী করণীয় জানানো হবে। তবে তিনি বলেন, সিলেট আওয়ামী লীগের ভেতরে এখন ঐক্যবদ্ধতা ও শৃঙ্খলা রয়েছে। কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি আছে। সেগুলোকে শুধরাতে পারলে আমরা আরো বেশি শক্তিশালী হব এবং এগিয়ে যাব। এ জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি সবাইকে অবিচল থাকার আহ্বান জানান তিনি।
মানবজমিন