সহজ হলো স্পেনের অভিবাসী আইন, সুবিধা পাবেন বাংলাদেশিরা
কবির আল মাহমুদ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৭:০৯,অপরাহ্ন ২৩ এপ্রিল ২০২১ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ স্পেন বরাবরই অভিবাসীদের কাছে পছন্দের একটি দেশ। বিশেষ করে সহজ শর্তে বৈধ হওয়ার সুযোগ থাকায় দেশটিতে অভিবাসীরা ভিড় জমান। অভিবাসীদের স্বাধীনভাবে স্পেনে প্রবেশের অনুমতি দান করার ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে স্পেন প্রথম। বর্তমানে স্পেনে অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্ব আইন আরো সহজ হল। টানা দুই বছর স্পেনে বসবাসের ডকুমেন্টেসহ ছয় মাস বৈধ ভাবে কাজ করার প্রয়জনীয় কাগজ পত্র জমা দিলে মিলবে এই বৈধতা। সম্প্রতি স্পেনের একটি আদালত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২৫ মার্চ স্পেনের গ্রানাডার একটি আদালত একজন অভিবাসী মহিলার আবেদনের প্রেক্ষিতে এই রায় দেন।
ইউরোপের একমাত্র দেশ স্পেন যেখানে ইউরোপের বাইরের তৃতীয় দেশের ক্ষেত্রে মাইগ্রেশন প্রক্রিয়াটা খুবই সহজ এবং নমনীয় যে কেউই খুব সহজেই এখানে থাকার ইচ্ছা পোষণ করলে ন্যূনতম শর্তে বসবাস করার সুযোগ পায়।
এখানে বিদেশিরা ১০ বছর নিয়মিত থাকার পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারে এবং তিন বছর নিয়মিত থাকার পর যদি তাদের সন্তান জন্মগ্রহণ করে তাহলে সে স্প্যানিশ নাগরিকত্ব পায়।
এই আইন অনুযায়ী এখন অনিয়মিতভাবে বসবাসকারী পিতা মাতার সন্তান জন্ম হলেও সে স্প্যানিশ নাগরিকত্ব পাবে বা দুজনের মধ্যে একজন স্পেনে নিয়মিতভাবে বসবাস করলে তাদের সন্তান ও স্প্যানিশ নাগরিকত্ব পাবে।
নতুন আইন অনুযায়ী এক সাথে টানা দুই বছর স্পেনে বসবাসের ডকুমেন্টের সাথে ৬ মাস বৈধ ভাবে কাজ করার প্রয়জনীয় কাগজ পত্র জমা দিয়ে বৈধ হওয়া যাবে। এজন্য কোনো কোম্পানীর কিংবা শপের অনুমতি পেপার ও লাগবে না আগে যা ছিল প্রযোজ্য।
আবেদনের নতুন নিয়মঃ স্পেন দুইবছর থেকে বসবাস করছেন এবং বিভিন্ন এসাইলাম নিয়ে কাজের পারমিশন পেয়ে কমপক্ষে ছয়মাস কাজ করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে কোন ক্রাইমে জড়িত থাকার প্রমাণ না থাকে। শুধুমাত্র তাঁরাই এই আবেদন করতে পারবেন।এছাড়া যাদের পূর্বে স্পেনের রেসিডেন্স কার্ড ছিলো কোন কারনে তাদের কার্ড বাতিল হয়ে গিয়াছে। এরকম যারা আছেন তাদের কর্মসংস্থান রেকর্ড প্রতিবেদন (বিদালাবোরাল) ছয় মাসের যদি থাকে তাঁরা এ সুবিধার আওতায় পড়বেন।
এই জন্য কোন কাজের কন্ট্রাকের প্রয়োজন হবেনা বা আরাইগো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবেনা। শুধু কর্মসংস্থান রেকর্ড প্রতিবেদনের (বিদালাবেরাল) কপি এবং বাংলাদেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট হলেই স্পেনে বৈধতা পেতে পারে’। এ জন্য যে কেউ চাইলে সরাসরি বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই নিয়মের বাইরে অন্যানরা এই নিয়মে বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তবে আবার যারা এসাইলাম কিংবা কাজের পারমিশন ছাড়া স্পেনে বসবাস করছেন তারা ও স্পেনের অভিবাসী হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এই ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগবে। এ ছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অধিবাসীদের জন্যও একইরকম সুযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মুতাসিমুল ইসলাম বলেন, নতুন এই আইনে বাংলাদেশিদের বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরী হলে বাংলাদেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটসহ দূতাবাসের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩ লাখ অভিবাসী কাজের দাবি ও নাগরিকত্বের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এর মধ্যে ১০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মো. ফজলে এলাহী জানান, নতুন আইনের আওতায় বিভিন্ন এসাইলাম নিয়ে স্পেনে থাকা প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী বৈধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি এজন্য কাউকে কোনো দালাল কিংবা উকিল এর শরণাপন্ন হয়ে সর্বস্বান্ত না হওয়ার আহবান জানান।
এব্যাপারে মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মোঃ ফজলে এলাহী জানান, স্পেনে বিভিন্ন এসাইলাম নিয়ে স্পেনে প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশী অভিবাসী রয়েছেন। তারা অধিকাংশ এর আওতায় বৈধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি এজন্য কাউকে কোনো দালাল কিংবা উকিল এর শরণাপন্ন হয়ে সর্বস্বান্ত না হওয়ার আহবান জানান।
ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন ইতালি, গ্রিস, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানিসহ অন্যান্য দেশে যেহেতু নাগরিকত্ব পাওয়াটা অনেক জটিল এবং অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া কাজেই যারা ইউরোপে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চায় তারা সাধারণত স্পেনকেই বেছে নেয়’। স্প্যানিশ পাসপোর্টধারী বাঙালিদের সংখ্যা অনেক যারা এখন পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। তা ছাড়া ব্যবসা বাণিজ্য করাটা ও এখানে অনেক সহজ বিধায় বাংলাদেশিরা এখানে সহজেই নাগরিকত্ব পাওয়ার আগ পর্যন্ত থাকতে পারে আর এই কারণেই মূলত এখানে বাংলাদেশিরা অভিবাসী হয়।