ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি
বিশ্ব বাংলা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:১১:৪৫,অপরাহ্ন ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯মরক্কো থেকে গত ২৬ নভেম্বর স্পেনে প্রবেশ করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ১ জন বাংলাদেশির লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। স্পেনের সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর ম্যালিয়ার একটি হাসপাতালে সংরক্ষিত লাশ বাংলাদেশি মো. আমির হোসেন জুনায়েদের। স্পেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২৬ নভেম্বরের নৌকাডুবিতে ৭ জন অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থায়- এমন একটি ছবি স্পেনের জাতীয় দৈনিক ’এল পাইস’ সহ কয়েকটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ছবিটি দেখে মো. আমির হোসেন জুনায়েদকে চিনতে পারেন তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজন। তাদের পক্ষ থেকে স্পেনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে জুনায়েদের ডকুমেন্ট পাঠিয়ে যোগাযোগ করা হয়।
এছাড়াও নিখোঁজ বাংলাদেশিদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরাও যোগাযোগ করেন বাংলাদেশ দূতাবাসে। বাংলাদেশ দূতাবাসের তরফ থেকে ম্যালিয়া হাসপাতালে যোগাযোগ করার পর গত ১৯ ডিসেম্বর মিনিস্টার ও মিশন উপপ্রধান এম হারুণ আল রাশিদ লাশ শনাক্তের জন্য ম্যালিয়ায় গিয়েছেন।
তিনি জানান, ম্যালিয়া হাসপাতালে তিন জনের লাশ সংরক্ষিত আছে। এরমধ্যে একজনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি বাংলাদেশের জুনায়েদ। বাকি দুই জনের মৃতদেহের মধ্যে একজন আফ্রিকান এবং অপরজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা ভেবেছিলাম বাংলাদেশি। দুই একটা পাসপোর্টের ছবির সাথে মিলেও গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আনা পাসপোর্টের ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে মিলেনি। নিয়ম হচ্ছে, চেহারা মিললেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিংবা ডিএনএ টেস্ট করার পর যদি না মিলে, তবে লাশ দাবি করা যাবে না।
এম হারুণ আল রাশিদ আরো বলেন, নিখোঁজদের ডকুমেন্ট নিয়ে ম্যালিয়া ক্যাম্পের কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সেখানে অবস্থানরত ৪১ জন বাংলাদেশির সাথেও আমি দেখা করেছি। সেখানেও নিখোঁজদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, যদি কেউ নিখোঁজ থাকেন এবং তাদের পরিবার থেকে আমাদের পাসপোর্ট তথ্য প্রদান করা হয়; তবে আমরা সেই পাসপোর্ট তৈরীর সময় তার প্রদত্ত ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে হাসপাতালে সংরক্ষিত ওই লাশ (ধারণা-বাংলাদেশি) শনাক্তকরণে চেষ্টা করবো।
শনাক্তকৃত নিহত জুনায়েদের লাশ দ্রুত বাংলাদেশে প্রেরণের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মিশন উপপ্রধান জানান। তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে দ্রুত লাশ প্রেরণে প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থাই আমরা করবো। তবে এখানে (স্পেনে) প্রশাসনিক কিছু নিয়ম কানুন আছে। সেগুলো পূরণ করতেও কিছুটা সময় লাগবে।
মৃত জুনায়েদের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদরের ইব্রাহিমপুর গ্রামে। তার পিতার নাম আলাউদ্দিন।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২৬ নভেম্বর ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া নৌকায় ৭৯ জন অভিবাসন প্রত্যাশী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৮ জন বাংলাদেশি ছিলেন। এরমধ্যে ১১ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করার পর ম্যালিয়া ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি ৭ জন বাংলাদেশির মধ্যে এক জন বাংলাদেশির লাশ ম্যালিয়া হাসপাতালে শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি ৬ জনের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। শনাক্তকৃত লাশসহ নিখোঁজ ৭ জনের মধ্যে মোট পাঁচ জন বাংলাদেশির পরিচয় জানা গেছে। পরিবার ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ পাঁচজনেরই বাড়ি সিলেট বিভাগের বিভিন্ন থানায়। সুনামগঞ্জ সদরের ইব্রাহিমপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে মো. আমির হোসেন জুনায়েদ ( লাশ শনাক্ত করা হয়েছে), বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের পেছিখুমরা গ্রামের আশিক মিয়ার ছেলে অবু আশরাফ (নিখোঁজ), বড়লেখা উপজেলার সুড়িকান্দি গ্রামের আফতাব উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন (নিখোঁজ) ও একই উপজেলার পকুয়া গ্রামের জালাল উদ্দীন (নিখোঁজ) এবং সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শাহীন আহমেদ (নিখোঁজ)।
নিহত ও নিখোঁজদের পারিবারিক সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রায় এক বছর দুই মাস আগে স্পেনে যাওয়ার উদ্দেশে এক দালালের মাধ্যমে প্রথমে তারা আলজেরিয়ায় যান। সেখান থেকে ২০ দিন আগে আফ্রিকার মরক্কোয় পৌঁছান। পরে কয়েক দফায় দালালরা তাদের স্পেনে পাঠানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ গত ২৫ নভেম্বর দালালদের সহায়তায় মরক্কোর নাদুর এলাকা থেকে নৌকায় সাগরপথে বাংলাদেশি ১৮ জনসহ মোট ৭৯ জন স্পেনের ম্যালিয়্যার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ২৬ নভেম্বর স্পেনের উপকূলবর্তী শহর ম্যালিয়ার নিকটে নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকাডুবির পর স্পেনের উদ্ধারকর্মীরা চার জনের মৃতদেহ ও ৫৫ জন আহত অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে অন্তত তিন জনের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। স্পেনের জাতীয় পত্রিকা ’এল পাইস’ সূত্রে জানা যায়, নৌকা ডুবির ঘটনায় অন্তত ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
একাধিক সূত্র এবং মৃত ও নিখোঁজদের পরিবার থেকে আরও জানা যায়, ইউরোপে যাবার আশায় দালালদের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। টাকার বড় অংশও পরিশোধ করা হয়। সূত্রঃ এসবিপিসি।