বার্সেলোনায় বাংলাদেশি মসজিদ এবং ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ

আফাজ জনি
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪৪:৫২,অপরাহ্ন ০১ মার্চ ২০২৫মধ্যযুগে যখন আরব সভ্যতা ইউরোপের বিভিন্ন অংশে গড়ে উঠছিল, তখন স্পেন ছিল তার অন্যতম এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ৭১১ সালে মুসলিমরা স্পেনের অধিকাংশ অঞ্চল জয় করে নেয় এবং দীর্ঘ প্রায় ৮০০ বছর এখানে শাসন করে একটি সমৃদ্ধ সভ্যতার জন্ম দেয়। আন্দালুসিয়া নামে পরিচিত এই মুসলিম শাসনকালে বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত, দর্শন ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছিল। ইউরোপীয় রেনেসা সৃষ্টিতেও মুসলিম এ সভ্যতার বিরাট এক ভূমিকা ছিল।
সময়ের সাথে সাথে মুসলিম শাসনের পতন ঘটলে, স্পেনের মুসলিম ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে থাকে। তবে, বাংলাদেশিরা মোটামোটি ২০০০ সাল থেকেই নিজেদের কমিউনিটির মধ্যে স্পেনের অনেক শহরের মত বার্সেলোনা শহরেও নতুন ইসলামী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন যা মুসলিম সমাজে এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে নতুন করে জাগিয়ে তুলছে।
বাংলাদেশিদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ৫টি মসজিদ এখন বার্সেলোনার গোটা মুসলিম কমিউনিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে। শাহ জালাল জামে মসজিদ, লতিফিয়া ফুলতলী জামে মসজিদ, দারুল আমাল জামে মসজিদ, বার্সেলোনা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এবং নুমান বিন ছাবিত জামে মসজিদ— এই মসজিদগুলো বার্সেলোনার বাংলাদেশি মুসলিম পরিবারগুলোর জন্য আশার প্রদীপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপে মুসলিম সম্প্রদায়ের সন্তানরা অনেক সময় তাদের ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, কিন্তু এখন এই মসজিদগুলোতে সঠিক ইসলামী জ্ঞান ও সংস্কৃতি, কোরআন তেলাওয়াতের ক্লাস, তরুণদের জন্য ইসলামিক আলোচনা এবং নামাজ শিক্ষা দিয়ে তাদের ধর্মীয় পথপ্রদর্শন করার পাশাপাশি প্রবাসি বাংলাদেশিদের মধ্যে ঐক্য এবং সহানুভূতির অনুভূতি গড়ে তুলছে।
স্পেনের আইন অনুযায়ী মাইক ব্যবহার করে আযান বাহিরে দেয়ার অনুমতি নেই, তবে সেই সীমাবদ্ধতার মাঝেও বার্সেলোনার মসজিদগুলোতে ধর্মীয় কার্যক্রম চলছে শান্তিপূর্ণভাবে। এগুলো শুধুমাত্র ইসলামী শিক্ষা নয় বরং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার বার্তা প্রচার করছে।
বাংলাদেশিদের প্রচেষ্টায় বার্সেলোনায় ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা, সহনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গীকারের ভিত্তিতে শক্তিশালী সমাজ গঠিত হচ্ছে। একসময় মুসলিম সভ্যতার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে পরিচিত এই শহরে আজ আবার ইসলামী জীবনধারা পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে যা বিশ্ববাসীকে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং ঐক্যের বার্তা দিচ্ছে। যদিও বার্সেলোনা পুরো সময় মুসলিম শাসনাধীন ছিল না তবুও মুসলিমদের অবদান শহরের সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক বিকাশে ছিল অপরিসীম, যা আজও দৃশ্যমান।
