বন্ধুত্ব হোক মানবতার সাথে
চন্দ্রানী দে পলি, নিউ ইয়র্ক ।
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৫৫:৫১,অপরাহ্ন ১৩ আগস্ট ২০২০আফ্রিকার গ্রামগুলোতে যে শিশুরা জন্মগ্রহন করে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তাদের রাখালের দায়িত্ব নিতে হয়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টা তাদের কাটে ভেড়া আর গরুর পেছনে। সময়টা তারা কাটায় খেলাধূলা করে, নদীতে সাঁতার কেটে, মাছ ধরে, পাহাড়ের উঠে, কোনো গাছের ডালে মৌচাক ভেঙ্গে অথবা নিজেরা নিজেরা মারামারি করে!
এমনই এক শিশুর দল একদিন দুপুরে একটা মজার খেলা বের করলো। খেলাটা হলো একটা গাধার পিঠে উঠতে হবে এবং তাকে গোটা মাঠ কোনা ঘেষে ঘুরিয়ে আনতে হবে। একে একে সবাই গাধার পিঠে উঠলো । সবশেষ ছেলেটা গাধার পিঠে উঠেই গাধাকে আঘাত করলো সামনে এগোবার জন্য।
গাধাটা এত পরিশ্রমের কারনে বিরক্ত আর ক্লান্ত হয়ে সে এদিক ওদিক যেতে লাগলো আর শেষে একটা কাঁটার ঝোপে গিয়ে ছেলেটিকে ফেলেই দিলো। হাতে মুখে কাঁটার দাগ নিয়ে ছেলেটা যখন উঠে দাড়ালো তখন তার লজ্জার সীমা রইলো না। অন্যান্য বন্ধুরা তাকে দেখে হাসতেই লাগলো।
গাধার পিঠ থেকে বন্ধুদের সামনে পড়ে যাওয়াটা আসলেই ভীষন লজ্জার ব্যাপার। এই লজ্জার কাছে হাত পায়ে পাওয়া আঘাতও কিছুই না। অনেক বছর পর ছেলেটা তার জীবনীতে ঘটণাটা শেয়ার করলো। লিখেলো যে সেদিনের সেই বন্ধুরা তার জীবনে অনেক বড় শিক্ষাটি দিয়েছিল। সে বুঝতে পেরেছিল আত্মসম্মানবোধ।বন্ধুরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিলো কেউ এগিয়ে এসে সমবেদনা জানায়নি।নিজের শত্রুকেও সম্মানের চোখে দেখার শিক্ষাও সে এই ঘটনা থেকেই পেয়েছিল। সেই কালো ছেলেটাই যে পরবর্তীতে গোটা আফ্রিকায় নেতৃত্ব দিয়েছিলো। সেই ছেলেটারই নাম নেলসন ম্যান্ডেলা।
প্রতেকের জীবনেই বন্ধুর ভুমিকা অনেকখানি। বন্ধুত্ব কোনো সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা বিচার করে না।শিক্ষা,অর্থবিত্ত,ধর্ম মানে না,বন্ধুত্ব যে কখন কোথায় তার স্হান দখল করে নেয় তা কেউ বলতে পারে নি, পারবেও না উইঢ্রো উইলসন বলেছন-বন্ধুত্ব একমাএ সিমেন্ট, যা সবসময় পৃথীবিকে একত্র রাখতে পারবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- আমরা বন্ধুর কাছ থেকে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই ও সে জন্যই বন্ধুকে চাই।
এমারসন বলেছেন -পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব ।
মার্টিন লুথার কিং বলেছেন- সবকিছুর শেষে আমরা শত্রুদের বাক্য মনে রাখবো না,কিন্তু বন্ধুর নিরবতা মনে রাখবো।
আমার কাছে বন্ধু মানে -হৃদয়ভরা স্বপ্ন ও একরাশ আশা নিয়ে পাশে থাকা এক অদৃশ্য শক্ত দেয়াল ,যার হৃদয়ের সীমানা আকাশকে হার মানায়। যাকে সহজেই বিশ্বাস করা যায়। জীবনের আঁকাবাঁকা পথকে রংধনুর মত ভালোলাগার রং দিয়ে সাজিয়ে দেয় সবসময়।যে মানুষটা দু:সময়ে পাশে থাকে আত্মবিশ্বাস ও আশার আলো হয়ে।ভালোলাগার মুহুর্তগুলোকে রাংগিয়ে তুলে রংধনুর মতো। মনখারাপে যে ভালোলাগা গানের পাখি হয়,সেই আমার বন্ধু।
বন্ধু হচ্ছে কথার পাহাড় যার সাথে কথা শেষ হয় না শুধু শুরু হয়। বন্ধু মানে সাগরপারের মিষ্টি হাওয়া,শুধুই আলতো করে জড়িয়ে ধরে ভালোলাগা তৈরী করা। বন্ধু মানে দু:সময়ে সাঁকো হয়ে অন্যপ্রান্তে যাওয়ার পথ সহজ করা ।
বন্ধুত্ব পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর একটা সম্পর্ক।সত্যিকারের বন্ধুত্ব যাদুর চাদরে ঢাকা ।যে দুরে অথবা কাছে থেকেও অদৃশ্য হাতে হাত রেখে বলে- বন্ধু পাশে আছি চিরকাল আর নিমিষেই মন ভালো করে দেয়া। বন্ধুত্বে কোন শর্ত থাকে না, থাকতে নেই। বন্ধুত্বের সম্পর্কে যদি কোন ভুল করে থাকি দু:খ প্রকাশ করি।কৃতজ্ঞতা মুখে নয়, মন জুড়ে থেকে যায়। বন্ধুত্বের মাঝে কোন জাতি,ধর্ম -বর্নের স্হান নেই,বন্ধু কোনদিন পুরনো হয় না। বন্ধুত্বের আবেগ যেন জোনাকী পোকার মতো,শুধুই দৃষ্টির ভালোলাগা,হাতে নিলে নয়। বন্ধুত্বের অনুভুতিটাও চাঁদের আলোর মতো, শুধুই দেখা যায়, যায় না ছোঁয়া। এককথায় বলতে গেলে বন্ধুত্ব মানে মানবতা, নি:স্বার্থ সহযোগিতা। বিশ্বের সকল মানুষের বন্ধুত্ব হোক মানবতার সাথে। আমাদের সকল ভালোলাগা ভালোবাসা উজাড় করি মানুষের কল্যানে। তবেই সৃষ্টি হবে একটা অন্যরকম পৃথিবী। সেই পৃথিবীটাই দেখতে চাই । সবাই ভালো থাকুন যার যার মতো করে।