রাজপথে ছিলাম, আজ নেতৃত্বে আসার আকাঙ্ক্ষা—সুফিয়ান আহমেদ

আফাজ জনি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:১২:২৯,অপরাহ্ন ১০ জুলাই ২০২৫বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কুলাউড়া উপজেলা শাখার আসন্ন কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের একজন দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা সুফিয়ান আহমেদ (আবু সুফিয়ান) সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। একইসাথে তিনি গত ১৫ বছর ধরে রাজপথে তার ত্যাগ, সংগ্রাম, কারাবরণ ও অবমূল্যায়নের বিবরণ দিয়ে একটি আবেগঘন ও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন উপজেলা ও জেলা নেতৃবৃন্দের প্রতি।
১৯৯৩ সালে ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া সুফিয়ান আহমেদ ছাত্রদলের সদর ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক পরবর্তীতে সভাপতি, কুলাউড়া ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পরবর্তীতে আহ্বায়ক, উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পরবর্তীতে আহ্বায়ক, জেলা ছাত্রদলের সমাজ সেবা সম্পাদক সহ বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন শেষে সর্বশেষ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বলেন, “দলের আদর্শ বা নির্দেশনার বাইরে কখনো একচুলও পা বাড়াইনি।” তিনি আরও জানান, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ১৪ বছর মামলা-হামলার শিকার হলেও তিনি পদ-পদবীর জন্য দলীয় নেতৃবৃন্দের কাছে কখনো আবেদন করেননি। এ সময় তিনি সাতবার কারাবরণ করেছেন এবং এখনো ২২টি রাজনৈতিক মামলার সম্মুখীন।
সুফিয়ানের দাবি, যখন দল ছিল চরম সংকটে তখন তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মাঠে ছিলেন। “রাজপথে পুলিশ হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঘুরেছি। গ্রামের মায়েরা রাতের খাবার দিয়ে সাহস দিয়েছেন। কখনো মাঠের আইলে, কখনো প্রতিবেশীর ছাদে রাত কাটিয়েছি।” তিনি জানান, তখনও দলের অনেক সিনিয়র নেতা রাজনীতি ছেড়ে নিরব ছিলেন বা সরকারি দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি বলেন “আমরা যখন মশাল মিছিল, হরতাল, অবরোধে ব্যস্ত ছিলাম তখন অনেকে দলের নাম ভাঙিয়ে বিদেশে টাকা তুলেছেন, কারো থেকে ৫০০ টাকাও মশালের তেল বা বাঁশ কেনার সহায়তা পাইনি। অথচ এখন সেইসব সুবিধাভোগীরাই ত্যাগীদের সামনে দাঁড়িয়ে পদ চান।”
পরিবার, সন্তান, স্ত্রী সবকিছুর বিপরীতে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করেছেন জানিয়ে সুফিয়ান বলেন, “জেলে বসে চার বছরের ছেলের কান্না শুনে বুকটা ফেটে গিয়েছিল, কিন্তু তাদেরকে সান্ত্বনাটাও দিতে পারিনি। এক সময় মামলা হামলার ভয়ে আমার নিজ পরিবারও আমাকে নিয়ে অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো”।
সুফিয়ান আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, “একই ব্যক্তি বছরের পর বছর সিন্ডিকেট করে পদ আঁকড়ে ধরে আছেন, নতুন প্রজন্মের জন্য কোনো জায়গা রাখেননি। নিজের স্ত্রী, সন্তান, ভাই সবাইকে নেতৃত্বে বসিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু রাজপথের ত্যাগীরা আজও মূল্যায়নের বাইরে।”
সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত আন্দোলন, বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর ২০২৩ থেকে জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আবারও রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি এবং তার সহযোদ্ধারা। অনেকেই বিদেশে টাকা সংগ্রহ করে আন্দোলনের নামে ব্যস্ত ছিলেন, আর নেতাকর্মীরা পুলিশের রোষানলে পড়ে কারাগারে দিন কাটিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
তিনি বলেন “এই কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি প্রশ্নের জবাব চাই- গত ১৫ বছরে কে কোথায় ছিলেন? কারা রাজপথে ছিলেন, কারা গা ঢাকা দিয়েছিলেন, আর কারা সুবিধা নিয়েছেন?”
সুফিয়ান আহমেদ এখন দলের তথ্যপ্রযুক্তি সচেতন ও জবাবদিহিতামূলক নেতৃত্ব গঠনের প্রত্যয় নিয়ে আগামী কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়তে চান। তিনি বলেন, “ত্যাগীদের হয়ে আমি কথা বলতে চাই। চিরস্থায়ী পদ দখলদারদের বিরুদ্ধে একটি পরিবর্তনের ডাক দিতেই আজ আমি কণ্ঠ তুলেছি।”
তিনি কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এইবার যেন সত্যিকার ত্যাগীদের মূল্যায়ন হয়। সিন্ডিকেট নয়, হয় যেন সংগঠনের জাগরণ।”
