স্পেনের হাসপাতালে পড়ে থাকা জুনেদের লাশ আসছে না বাংলাদেশে
বিশ্ব বাংলা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪৮:৩৮,অপরাহ্ন ১১ জানুয়ারি ২০২০সাহাদুল সুহেদ: স্পেনের ম্যালিয়া হাসপাতালে পড়ে থাকা বাংলাদেশি মো. আমির হোসেন জুনেদের লাশ বাংলাদেশে আসছে না। মরক্কো থেকে স্পেনে প্রবেশ করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত জুনেদের লাশ শনাক্ত করা গেলেও তার পরিবার বাংলাদেশে লাশ গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই বাংলাদেশে লাশ প্রেরণে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে গতকাল শুক্রবার জানিয়েছেন স্পেনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা। নিহত জুনেদের বাড়ি সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামে। তার পিতার নাম আলাউদ্দিন।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত বছরের ২৬ নভেম্বর ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া নৌকায় ৭৯ জন অভিবাসন প্রত্যাশী ছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন ১৮ জন বাংলাদেশি। এরমধ্যে ১১ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করার পর ম্যালিয়া ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি ৭ জন বাংলাদেশির মধ্যে মো. আমির হোসেন জুনেদকে উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থায়- এমন একটি ছবি স্পেনের জাতীয় দৈনিক ‘এল পাইস’ সহ কয়েকটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ছবিটি দেখে মো. আমির হোসেন জুনেদকে চিনতে পারেন তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন। তাদের পক্ষ থেকে স্পেনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে জুনেদের ডকুমেন্ট পাঠিয়ে যোগাযোগ করা হয়। বাংলাদেশ দূতাবাসের তরফ থেকে ম্যালিয়া হাসপাতালে যোগাযোগ করার পর গত ১৯ ডিসেম্বর মিনিস্টার ও মিশন উপ প্রধান এম হারুণ আল রাশিদ ম্যালিয়ায় গিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের ভিত্তিতে জুনেদের লাশ শনাক্ত করেন।
বাংলাদেশে লাশ পাঠানো প্রসঙ্গে গতকাল বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার ও মিশন উপপ্রধান এম হারুণ আল রাশিদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জুনেদের লাশ শনাক্তের পরই আমরা দূতাবাসের পক্ষ থেকে সরকারি খরচে বাংলাদেশে লাশ প্রেরণের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করি। কিন্তু বাংলাদেশে জুনেদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা লাশ গ্রহণে অনাগ্রহ/অক্ষমতা প্রকাশ করায় লাশ পাঠানো যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে নিহত জুনেদের ভাই এর মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। এদিকে স্পেন সুনামগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন ইন কাতালোনিয়ার সভাপতি মনোয়ার পাশার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমরা জুনেদের পরিবার ও বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। লাশ শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেও দূতাবাসকে সরবরাহ করি। যাতে জুনেদের পরিবার অন্তত তার লাশটা দেখতে পারে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুনামগঞ্জ জেলার একজন স্পেন প্রবাসী জানান, বাংলাদেশে দালাল চক্র জুনেদের পরিবারকে ভয় ভীতি দেখাচ্ছে, যাতে তার লাশ বাংলাদেশে আনা না হয়। একারণেই হয়তো জুনেদের লাশ বাংলাদেশে গ্রহণ করতে ভয় পাচ্ছে জুনেদের পরিবার। তবে যেসকল দালালের কারণে জুনেদ মৃত্যুবরণ করলো এবং তার লাশ পর্যন্ত দেখতে পারলো না তার মা-বাবা, সেইসব দালালদের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার ও মিশন উপপ্রধান এম হারুণ আল রাশিদ বলেন, এরকম অভিযোগ যদি লিখিত আকারে জুনেদের পরিবার থেকে আমাদের দেয়া হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই সেই চক্রের বিরুদ্ধে যাবতীয় ব্যবস্থা যাতে নেয়া যায়, সে চেষ্টা করবো।
প্রসঙ্গত, ভাগ্যান্বেষণে উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় দালালদের খপ্পরে পড়ে নৌকায় করে ভ‚ মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনে প্রবেশের দুঃসাহস করছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। এ কঠিন পথে নৌকাডুবিতে নিয়মিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশী শামিল হচ্ছেন এ লাশের মিছিলে। গত ২৬ নভেম্বরের নৌকা ডুবিতে এখনো বাংলাদেশি ৬ জন অভিবাসন প্রত্যাশী নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। একাধিক সূত্র এবং মৃত ও নিখোঁজদের পরিবার থেকে জানা যায়, ইউরোপে যাবার আশায় দালালদের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। টাকার বড় অংশও পরিশোধ করা হয়।