স্পেনের করোনা পরিস্হিতি-২১ এপ্রিল

বিশ্ব বাংলা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৫২:০৭,অপরাহ্ন ২২ এপ্রিল ২০২০আজকের কাতালোনিয়া:
• আজ (২৪ ঘন্টায়) কাতালোনিয়ায় মৃতের সংখ্যা গতকাল তুলনায় যথেষ্ট নিম্নগামী। আজ মৃতের সংখ্যা রেজিস্ট্রি করা হয়েছে ১৭৬ জন। গতকাল মৃতের সংখ্যা ছিলো ৩২৮ জন। আক্রান্ত হয়েছে ১,০৯৮জন। এই নিয়ে কাতালোনিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৮,৮৪৫জন। মোট আক্রান্ত হলো ৪৪,৭৯৩জন।
• অবশেষে স্পেনে শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সের ৬০ লক্ষ ৮০ হাজার শিশু দীর্ঘ একমাসেরও বেশি সময় হোম কোয়ারেন্টাইনে বন্ধী থাকার পর মুক্ত বাতাসে বের হবার অনুমতি পাচ্ছে। আগামী ২৭ এপ্রিল সোমবার নয়, বরং একদিন আগে ২৬ এপ্রিল রবিবার থেকেই ১৪ বছর থেকে ছোট শিশুরা বড়দের সাথে বাইরে বের হতে পারবে। তবে বড়দের সঙ্গী হয়ে, শুধুমাত্র সুপারমার্কেট, ফার্মেসি আর ব্যাংকএ যাবার জন্য বের হতে পারবে। কোন উন্মুক্ত জায়গায় খেলা করতে বা পার্কে যেতে পারবে না। আজকে স্বাস্থ মন্ত্রনালয় এই ঘোষণা দিয়েছে। মন্ত্রনালয় বলেছে, এরই মধ্যে আরো বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হবে যে, বাসা থেকে সর্বোচ্চ কতো দূরে এবং কত সময়ের জন্য বাচ্চারা বের হতে পারবে। কাতালোনিয়া তথা সমগ্র স্পেনে এই নিয়মই বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
• বার্সেলোনায় Eixampleতে গত মাসের ১৮ তারিখে ১জন ও চলতি মাসের গত সপ্তাহে আরো দুইজনসহ মোট তিনজন রাস্তায় ঘুমানো খুন হয়েছে। তারা গৃহহীন বলে রাস্তায় ঘুমাতো।
৩ জনকেই রাস্তার ফুটপাতে ঘুমন্ত অবস্থায় লোহার পাতের মতো ধাতব ভারি কিছু দিয়ে মাথা থেতলে মারা হয়েছে।
একই রকম জীবনধারণ করা এই ৩জন মানুষকে একই পদ্ধতিতে খুন করার কারণে, পুলিশ ৩ জনের খুনী একজনই বলে সন্দেহ করছে। বার্সেলোর Example এরিয়ার ২ কিলোমিটারের মধ্যেই এক কায়দায় ৩টি খুনের ঘটনা ঘটলো। গত মাসের ১৮ তারিখে প্রথম খুনের পর, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার দ্বিতীয় ও বৃহস্পতি বার তৃতীয় খুনটি হয়। পুলিশ হন্যে হয়ে খুনীকে খুঁজছে।
এমনও ধারণা করা হচ্ছে, রাস্তায় থাকা এসব মানুষের কারণে করোনা ছড়াবে, এমন হিংসাত্মক চিন্তা থেকে লকডাউন চলা নির্জন রাস্তায় নির্বিঘ্নে কেউ একজন এই খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। কারণ, পথে থাকা মানুষের খুন করার মতো শত্রু থাকার কথা নয়।
আজকের স্পেন:
• আজ ২১ এপ্রিল (মঙ্গলবার) স্পেনে মৃতের সংখ্যা গতকালের থেকে শতকরা ৮% বেশি। আজ মৃত্যুবরণ করেছে ৪৩০জন। গতকাল মৃতের সংখ্যা ছিলো ৩৯৯জন এবং গত পরশু ছিলো ৪১০জন।
এরই মধ্যে গতকাল স্পেনে আক্রন্তের সংখ্যা ২ লক্ষ অতিক্রম করেছে। বর্তমানে সংক্রমনের হার ২ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি একজন আক্রান্ত রুগি গড়ে ২জনের মধ্যে ভাইরাস ছড়াচ্ছে।
আজ নতুন আক্রান্তের সংখ্যা রেজিস্ট্রি করা হয়েছে ৩,৯৬৮জন, যা গতকাল থেকে ৭% শতাংশ কম। গতকাল আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ৪২৬৬জন এবং গতপরশু ছিলো ৪২১৮জন।
আজ পর্যন্ত স্পেনে মোট মৃতের সংখ্যা ২১ হাজার ২৮২ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ৪ হাজার ১৭৮জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮২ হাজার ৫১৪ জন।
• এখন পর্যন্ত স্পেনে মোট আক্রান্তের মধ্যে শতকরা ১০ শতাংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এবং ৪০ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়েছে। বাকী ৫০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসাধীন আছে।
• স্পেনের ভোক্তা ও ব্যবহারকারীদের সংগঠন OCU করোনা মহামারীর কারণে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দামের ঊর্ধ্বগতি সনাক্ত করেছেন। আলু ও নারাঙ্খা (মাল্টা)র মরসুম শেষের দিকে থাকা ও করোনা মহামারির কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া দাম বেড়েছে দুধ ও টিনে প্রক্রিয়াজাত (লাতায় আবদ্ধ থাকে এমন সব) খাবার।
সংস্থাটি বাজার বিশ্লেষণ করে দেখেছে, বর্তমানে বাজারে সঙ্কট আছে ময়দা, টিস্যুপেপার, হাত ধোয়ার সাবান ও কিছু লেগুমব্রে জাতীয় খাবার।
এছাড়া সুপার মার্কেটে 2×1 অফারসহ অন্যান্য অফার ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যপ্ত স্টক এখনো আছে বলে OCU মনে করে।
• স্পেন সরকার স্যানিটারি পণ্যকে শুল্কমুক্ত পন্যের আওতায় আনছে। সেই অনুযায়ী মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, জেল, জীবানুনাশক অ্যালকোহলে IVA (ভ্যাটের পরিমাণ) ০% থাকবে, যাতে ভোক্তারা আরো কম মূল্যে কিনতে পারে। করোনা মহামারীকে মোকাবেলার জন্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
• করোনা মহামারির কারণে বিমানগুলো তাদের সিট সংস্থানে পরিবর্তন আনবে। এ জন্য বিমানের ভাড়া বৃদ্ধিরও সম্ভাবনা আছে। এছাড়া যাত্রীদের বিমানে ওঠার আগে কোভিড১৯ এর জন্য রক্ত পরীক্ষাও করা হবে।
এরই মধ্যে বিমান প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ১৩ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সংক্রমন এড়াতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য মাঝখানের সিট ব্লক রেখে ওয়েবে তাদের টিকে বিক্রি করছে। ইজিজেটও তাদের প্ল্যানে মাঝখানের সিট খালি রাখার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে। উইজ এয়ার তাদের প্রতি বিমানের সিটের তিনভাগের শুধু দুইভাগ পূর্ণ করে সার্ভিস দেবে বলে জানা গেছে।
তবে এর সাথে একমত নন ইউরোপের প্রসিদ্ধ বিমান কম্পানি Ryanair. প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মাইকেল ওলিয়ারি বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর মাঝখানের সিট খালি রেখে বিমান চালানোকে ”পাগলামি” প্রস্তাব বলে মন্তব্য করেন। তিনি অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ার পড়ার যুক্তি দেখিয়ে এই মন্তব্য করেন।
মিরন নাজমুল, স্পেন।
