নিয়ন্ত্রণের ভাবনা নাকি অপরাজিত ভাবনা সালমান শাহ্ থেকে সুশান্ত রাজপুত

চন্দ্রানী দে পলি, নিউইয়র্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪৭:৪৫,অপরাহ্ন ১৮ জুলাই ২০২০আর পারছি না, অসহ্য, বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না, আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, আমার জীবন শেষ, আর কিছুই ভাবতে পারছি না, এ জীবন আর রাখতে চাই না। এই কথাগুলো আমাদের জীবন চলার বাঁকে অনেকবার বলে থাকি। ও হ্যাঁ, লেখাটা শুরু করার আগে আমি একরাশ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চাই তাদের, যারা পরীক্ষিত প্রতিভাবান, অস্বীকার করা যায় না এদের অবদান, যাদের ভাগ্যে নেই কোনো অ্যাওয়ার্ড, কাজের স্বীকৃতি, ন্যূনতম মূল্যায়ন, যারা হার মানেনি হতাশার কাছে, যাদের মৃত্যু হয়েছে স্বাভাবিক নিয়মে। একবার ভেবে দেখুন, এ রকম অনেক মানুষ আছে, যারা জীবনে কাজের স্বীকৃতি পায়নি, জীবনযাপন ছিল সাধারণ, হতাশা তাদের গ্রাস করতে পারেনি। তারাও বেঁচে থাকার শেষ দিন পর্যন্ত আত্মহত্যার কথা ভাবেনি। কারণ এদের ভাবনার জগৎটা ছিল অপরাজিত, পজিটিভ। আবার এ রকম প্রতিভার মৃত্যুর পরে আমরা প্রতিযোগিতা করি কে আগে শোকসভা করব আর সোনাঝরা কথা বলে অর্গানিক মানবিক মানুষ হব।
উপরের লেখাগুলো লেখার উদ্দেশ্য একটাই-হতাশাকে পুঁজি করে আমরা যেন অকালমৃত্যুর দিকে না হাঁটি।
করোনাভাইরাসের কারণে শ্বাসরুদ্ধকর লকডাউন ও চাপা ভয়কে জয় করে যখন স্বাভাবিক নিয়মে ফিরছি, তখন অনেককেই মোকাবিলা করতে হবে আরেকটি মহামারির, সেটা হলো মানসিক অসুস্থতার মহামারি, অবসাদের মহামারি। অকারণে মন খারাপ হওয়া, মনের মধ্যে ভয় ভয় কাজ করা, কখনো সুস্থ কখনো অসুস্থ বোধ হওয়া। যখনই মন খারাপ হয়, ভাবুন কীভাবে মন ভালো রাখা যায় সেটাই করুন।
জীবন একটাই, সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, চাওয়া না পাওয়া হতাশা শব্দগুলো জীবনেরই অংশ। মৃত্যু দিয়ে নয়, বরং চ্যালেঞ্জ করতে হবে বেঁচে থেকে। নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের প্রতি আস্থা রাখুন, আপনিই পারবেন এই ভাবনাটা মনের মধ্যে রাখুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
অনেক মানুষ আছে, যারা সুখটাকে টেনে আনতে রাজি নয়। অনাকাক্সিক্ষত মানসিক সমস্যা দূর করা সবার কাজ নয়, এতটা সেন্সিবল মানুষ সবাই নয়। হাজারে একজন হয়, যা সেটা নাও পারতে পারে। কিন্তু মানসিক সমস্যায় থাকা বন্ধুকে ছেড়ে যাওয়া অবিবেচনা। কারো চোখের জল না মোছাতে পারলেও এমন কাজ না করা, যেন তার চোখের জল আরও বাড়িয়ে দেয়, তাকে আরো অবসাদ, হতাশার দিকে ঠেলে দেয়।
আসলে কীভাবে আমরা চারপাশের পরিবেশটা দেখছি সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন আমাদের জীবনে নানা রকম ঘটনা ঘটে, কাজের চাপ, দৈনন্দিন জীবনের বাধা-বিপত্তি ইত্যাদি। কারো কাছে সেটা স্বাভাবিক, কারো কাছে স্ট্রেসের কারণ। একমাত্র ইতিবাচক চিন্তা এবং সবার উপরে জীবন সত্য এই কথাকে যারা সত্য ভাবে, জীবনে যা কিছুই ঘটুক আমাকে বাঁচতে হবে আমার জন্য অথবা সবার জন্য, তারাই সফল, তারাই শ্রদ্ধেয়, তারাই রিয়েল হিরো।
সালমান শাহ্ থেকে সুশান্ত রাজপুতের মধ্যখানে অনেকেই জীবনের কাছে হার মেনেছেন। প্লিজ, ভাবনার জগৎটাকে সমৃদ্ধ করুন, এমন ভাবনা আপনাকে গ্রাস না করুক যে ভাবনা আপনাকে আড়ালে নিয়ে যাবে।
জীবন একটাই, সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, চাওয়া না পাওয়া হতাশা শব্দগুলো জীবনেরই অংশ। মৃত্যু দিয়ে নয়, বরং চ্যালেঞ্জ করতে হবে বেঁচে থেকে।
নিজের ভাবনাগুলো পরাজিত নয়, অপরাজিত করতে হবে। আমরা কেমন থাকব, তা নির্ভর করে আমাদের মানসিক অবস্থার ওপর। আর্থিক অবস্থা বা জোর যা-ই হোক, মনটা যদি সতেজ আর ঝলমলে থাকে, তাহলে জীবনটা কত সুন্দর হয়ে ওঠে। নিজেকে প্রচারের প্রতিযোগিতা নয়, যা আছে তা-ই নিয়ে আনন্দে থাকার প্রতিযোগিতা করুন। হাসি-খুশি অথবা অল্পতে সন্তুষ্ট ও পরিবার নিয়ে আনন্দে থাকার চেষ্টা করুন।
আর কোনো সালমান শাহ্ অথবা সুশান্ত রাজপুত হতে চাই না আমরা। হই না যতই পরাজিত, জীবনের কাছে কখনোই হব না পরাজিত। আমার/আমাদের ভাবনাগুলো হবে শুধুই অপরাজিত। আত্মহত্যা নয়, বেঁচে থাকাই হোক শেষ কথা। সবাই ভালো থাকুন যার যার মতো করে।
