ইংল্যান্ডে বাঙালী কমিউনিটির সাফল্যের ঝুড়িতে যুক্ত হলো আরেকটি নাম

আহমেদ সুহেল
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:১৮:০১,অপরাহ্ন ১৭ নভেম্বর ২০২০ইংল্যান্ডের বাঙালী কমিউনিটির সাফল্যের ঝুড়িতে যুক্ত হয়েছে আরো নতুন একটি নাম। বার্মিংহামের নিকটবর্তী শহর ওয়ালছলের বৃটিশ বাঙালী মিশ রহমান লেবার পার্টির সর্বোচ্চ ফোরাম ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হবার গৌরব অর্জন করেছেন। ইংল্যান্ডে দীর্ঘদিন ধরে বাঙালীরা মুলধারার রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও লেবার পার্টির কিংবা অন্য কোনো দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম ন্যাশনাল এক্্িরকিউটিভ কমিটিতে মিশ রহমানই প্রথম কোনো বৃটিশ বাঙালী হিসেবে এই দায়িত্ব পাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সারাদেশের প্রায় পাঁচ লক্ষ আশি হাজার লেবার পার্টির সক্রিয় কর্মীর সরাসরি ভোটে লেবার পার্টির ন্যাশনাল এক্্িরকিউটিভ কমিটি গঠন করা হয়। নির্বাচনী মেনিফেষ্ট তৈরী,এমপি মনোননয়নে কাজ করা,দলীয় কর্মপন্থা নির্ধারনসহ লেবার পার্টির সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট লেবার পার্টির এই ন্যাশনাল এক্্িরকিউটিভ কমিটি। যেখানে সারা দেশের লেবার পার্টির কর্মীদের ভোট পেয়ে মিশ রহমান এক্্িরকিউটিভ মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। গত ১৩ নভেম্বর এই ফলাফল ঘোষনা করা হয়। উল্লেখ্য লেবার পার্টি ইংল্যান্ডের প্রধান বিরোধী দল,তারা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় ছিলো এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে আবারো ক্ষমতায় আসীনের বৃহৎ দাবীদার।
কাউন্সিলর এমপি মেয়রসহ মুলধারার রাজনীতিতে বাঙালীদের অনেক প্রাপ্তি থাকলেও ইংল্যান্ডের কোনো রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারনী ফোরামে মিশ রহমানের আগে আর কোন বাঙালী নির্বাচিত হতে পারেননি। যুক্তরাজ্যের বাঙালীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলাভাষী টিভি চ্যানেল এসে গত ১৭ নভেম্বর মিশ রহমানের লেবার পার্টির ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য নির্বাচিত হবার সংবাদ প্রচারের পর কমিউনিটিতে তাকেঁ নিয়ে উচ্ছ্বাসের ছড়াছড়ি শুরু হয়েছে। লেবার পার্টির বাঙালী অনেক সদস্যও জানতেন না যে মিশ রহমান বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। অনেকে বাঙালী না জেনেও দলের জন্য তার ভূমিকা অবলোকন করেই তাঁেক ভোট দিয়েছেন।
বার্মিংহামের বাঙালী কমিউনিটির কাছে বেশ পরিচিত হলেও লেবার পার্টির ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির মেম্বার নির্বাচিত হওয়ায় মিশ রহমানকে জানার বিষয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের সকল প্রবাসী বাঙালীরা আগ্রহী হয়ে উঠে। সকলের এই আগ্রহের কারণে বাংলা কাগজের পক্ষ থেকে মিশ রহমানের সাথে কথা বলে এই প্রতিবেদনটি তৈরী করা হলো।
৪১ বছর বয়সী বৃটিশ বাঙালী মিশ রহমানের জন্ম বার্মিংহামের নিকটবর্তী ওয়ালসল শহরে। তাঁর বাবার নাম মরহুম আলহাজ্ব মুহিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়া আর মা মিসেস জোবেদা খানম। তারা সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলার সোনাতিতা ফকির পাড়া গ্রামের অধিবসী ছিলেন। মিশ রহমানের বাবা মরহুম আলহাজ্ব মুহিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়া ছিলেন সকলের কাছে অত্যন্ত পরিচিত ও স্জ্জন ব্যক্তি। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি বাঙালী কমিউনিটির উন্নয়নে জন্য নানাভাবে কাজ করে গেছেন। সেই সুবাধে একবারে ছোটোবেলা থেকেই কমিউনিটির মানুষদের সাথে মিশ রহমানের বেশ সংস্পর্শ। তিনি তাঁর বাবার সাথে সেই শৈশবকাল থেকেই নানা সভা সমাবেশে যোগ দিতেন। সেই তখন থেকেই কমিউনিটির জন্য কাজ করার বিষযে মিশ রহমানের মনে একটা ব্রত কাজ করছিলো। তিনি ১৯৯৭ সালে লেবার পার্টিতে যোগ দিলেও ২০০২ সালে তৎকালীন সময়ে বৃটেনের ক্ষমতাসীন থাকা লেবার পাটির প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার অন্যায়ভাবে ইরাক যুদ্ধে বৃটেনকে জড়িয়ে ফেলায় মিশ রহমান দল থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে লেবার দলীয় লীডার এড মিলিবান্ডের সময়ে আবারো লেবার পার্টিতে যোগ দিয়ে স্বক্রিয় হোন তিনি। এক পর্যায়ে মিশ রহমান ওয়ালসলের ওলব্রিজ ওয়ার্ড থেকে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দুদফায় কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্ধন্দিতা করেন। ওলব্রিজ ওয়ার্ডকখনো জয় না পাওয়া লেবার পার্টি সেখানে অনেকটা পেপার প্রার্থী হিসেবেই মিশ রহমানকে প্রার্থীতা দিলেও তিনি নিজ যোগ্যতায় লেবার পার্টির পক্ষে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট আনতে সক্ষম হোন। তাঁর কারিশমায় সেখানে লেবার পার্টি শক্তিশালী হতে শুরু করলেও ২০১৮ সালে মিশ রহমান ওয়েষ্ট মিডল্যান্ডসের অলব্রিজ – ব্রাউনহীল নির্বাচনী এলাকায় লেবার পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান এবং অদ্যাবধি সেই দায়িত্বে বহাল আছেন। কিন্তু সেখানে লেবার পার্টির দায়িত্ব পালনকালে তিনি আবিষ্কার করেন যে, সংখ্যালঘু কমিউনিটির একটি বিশেষ গোষ্টী নানা কৌশলী পন্থায় লেবার পার্টির স্থানীয় রাজনীতিকে অনেকটা নিয়ত্রিত করে আছে; তাছাড়া স্থানীয়ভাবে অনেক প্রতিবন্ধকতাও আছে, বিধায় সেখানে সুবিধা করা বেশ মুস্কিল হবে। সেই চিন্তা থেকেই মিশ রহমান লেবার পার্টির বামপন্থী গ্রুপ মোমেনটামে স্বক্রিয় হয়ে ন্যাশনাল টিমের লীডারশীপে কাজ করতে থাকেন। দলের প্রতি একনষ্টিতা ও নানা কার্যক্রমরে কারণে একপর্যায়ে মিশ রহমানের সামনে সুযোগ আসে ন্যাশনাল এক্্িরকিউটিভ কমিটির মেম্বার পদে লড়বার। লেবার পার্টির বামপন্থী গ্রুপ মোমেনটাম থেকে মিশ রহমানসহ ছয়জন নির্বাচন করেন এবং পাঁচজন বিজয়ী হোন। তবে লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসন করে নেওয়া মিশ রহমানের উত্থান অনেকটা কঠিইনই ছিলো। তারপরও কঠোর পরিশ্রম.চরম নিষ্টা একাগ্রচিত্ততা এবং সততার মাধ্যমে তিনি এই সাফল্য অর্জন করেছেন। কেউই কাউকে এমনি এমনি আসনে বসিয়ে দেয়ান কিংবা ছেড়েও দেয়না উল্লেখ করে মিশ রহমান বলেন,অন্য কমিউনিটির কেউ আমাদের বাঙালীদের জন্য কাজ করবে এরকম ভাবার কোনো অবকাশ নেই; অতীতে অন্য কমিউনিটিই আমাদের সিড়িঁ হিসেবে ব্যবহার করে উপড়ে উঠেছে,এখন আমাদের সময় এসেছে নিজেদের যোগ্যতা প্রমান করার।
লেবার পার্টির ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির মেম্বার হওয়ার পর তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার কি জানতে চাইলে বাংলা কাগজকে মিশ রহমান বলেন,প্রথমেই তিনি তাঁর দল লেবার পার্টিকেই সর্ব্বোচ্চ গুুরুত্ব দেবেন। পরবর্তীতে তিনি যেহেতু সংখ্যালঘু কমিউনিটি থেকে এসেছেন সেহেতু সংখ্যালঘু কমিউনিটি, বিশেষ করে বাঙালী কমিউনিটির উন্নয়নের জন্য কাজ করার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি মূলধারার রাজনীতিতে কমিউনিটির মানুষদের সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং তার দল থেকে যাতে কমিউনিটি এবং কমিউনিটি থেকে তাঁর দল উপকৃত হতে পারে সেইভাবে কাজম করবেন।
বার্মিংহামের বাঙালী কমিউনিটির কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত মিশ রহমান স্থানীয়দের কাছে মিসবাউর রহমান নামে পরিচিত। জ্নম বৃটেনে হলেও চমৎকার সিলেটি ভাষায় কথা পানে মিশ রহমান। সুনামগঞ্জের ছাতকের জামাই মিশ রহমান স্ত্রী সুলতানা বেগমকে নিয়ে ওয়ালসলেই বসাবাস করছেন। তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। মিশ রহমান বাংলা কাগজের মাধ্যমে তাঁর উপড় অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য বাঙালী কমিউনিটির সকলের কাছে জন্য দোয়া কামনা করেছেন। উল্লেখ্য মিশ রহমান যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহৎ ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্টান লতিফিয়া ফুলতলী কম্পেক্সের সেক্রেটারীরও দায়িত্ব পালন করছেন।
